শম্ভুনাথ

–শান্তনু সোম
গ্রামের বাড়ির দাওয়ায় বসে আছেন শম্ভুনাথ। ক্ষেতের কাজ সেরে এই ফিরলেন। ফতুয়াটা খুলে তালপাতার পাখা নেড়ে নিজেই হওয়া খেতে শুরু করলেন। গ্রামে ইলেকট্রিসিটি নেই সেরকম নয়, কিন্তু দিনে মোটে তিন চার ঘণ্টার বেশি থাকে না। ফতুয়াটা ঘামে ভিজে জবজব করছে, ওটাকে বেড়ার ওপরে মেলে দিলেন, শুকিয়ে যাবে। ঘামটা শুকোলেই পাশের পুকুরে চান করে খেতে বসবেন। উমার রান্না এর মধ্যেই আশা করি শেষ হয়ে যাবে। রান্না বলতে তো মোটা চালের ভাত, ডাল আর পাঁচমিশালি সবজি। বাড়িতে একটা গরু আছে বলে সবার এক গ্লাস করে দুধ জোটে। এ ছাড়া আর পুষ্টিকর কিছুই দিতে পারেন না ছেলে মেয়ে গুলোকে। চার ছেলে মেয়েদের মধ্যে দুজন সাথে থাকে। বাকি দুজন বাড়ীর বাইরে। কোন রকমে ছোট খাট কাজ করার চেষ্টা করছে। সরস্বতী জেলার একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ায়, এখনও টেম্পোরারি, কবে পার্মানেন্ট হবে কেউ জানে না। নিজের খরচ সামলে মাসে দু হাজার টাকা বাড়ীতে পাঠায়, মাসে একবার আসে। মেয়েটা বড্ড রোগা হয়ে গিয়েছে আজকাল, একটা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকে। কি খায় কে জানে!
শম্ভুনাথ পাঁচ বিঘে জমি চাষ করেন। তাও আজকাল জলের পাম্প নিয়ে প্রবল সমস্যা। জল পেতে গেলেও পাড়ার ছোকরাদের হাতে উপরি কিছু দিতে হয়, নইলে সময়ের আগেই পাম্প বন্ধ করে দেয় ওরা। শম্ভুনাথ ঝুট ঝামেলা পছন্দ করেন না। শরীরটা দেখতেই বড়সড় কিন্তু এর মধ্যেই নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। সুগার, প্রেসার সবই আছে। উমা কিছু জানেনা, জানলে চিন্তা করবেন। লক্ষ্মীর গলা পেলেন, মাড় ভাত নিয়ে কালু কুকুরকে ডাকছে। মেয়ে জীবজন্তু খুব ভালোবাসে। বাড়ীর পশ্চিম কোনে একটা প্যাঁচা থাকে, সেটাও লক্ষ্মীর খুব ন্যাওটা। বড় ছেলে কার্তিক একটা মোবাইল সরানোর দোকানে চাকরি করে, পাশের এক মহকুমায়। ওখানেই মেস করে থাকে, খুবই অল্প রোজগার, মাসে মাসে ওকে কিছু টাকা পাঠাতেও হয়। চাষের রোজগার দিন দিন কমছে। কি করে কি হবে বুঝতে পারেন না শম্ভুনাথ। তবু গণেশ আছে। খুব বাধ্যের ছেলে, বাবাকে সাহায্যের ব্যাপারে কোন কসুর নেই। ওর ভরসাতেই যেটুকু কাজ করতে পারেন। উমার শরীরও ভাঙছে। সব বুঝতে পারে তবু মুখে কিচ্ছুটি বলে না। এটাই শম্ভুনাথের আরো কষ্টের জায়গা।
অথচ এরকম হবার কথা ছিলনা। ওপারে অনেক বেশি জমিজমা ছিল, তিনটে বড় পুকুর ছিল। বড়লোক ছিলেন না, কিন্তু কোন কিছুর অভাব ছিল না। যৌথ পরিবার ছিল। শম্ভুর জ্যাঠা বলতেন যে আমাদের কাপড় আর নুন ছাড়া কিছু কিনতে হয়না। কিন্তু কি যে হল।
কি যেন হয়েছিল? মনে করতে গেলে কিরকম করে ওঠে মাথার ভেতরে। মনে পড়েনা না কি মনে করতে চান না? শুধু মনে আছে একটা পচা কাদার পুকুরে লক্ষ্মীকে নিয়ে গলা ডুবিয়ে বসে আছেন মাঝ রাত্তিরে, কাদা নিজের মাথায়, লক্ষ্মীর চুলে লেপে দিছেন। রাত্তিরে মশাল জ্বেলে কারা যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে ওদের ও আরো অনেককে। মাঝে মাঝে নারী কণ্ঠের চিল চিৎকার আসছে এদিক ওদিক থেকে। তার পর? আর কিছু মনে পড়ে না।

কি করে এখানে এলেন, কিভাবে চাষ শুরু করলেন এই শুকনো জমিতে সেগুলো কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেছে। কি যেন একটা নিয়ে এসেছিলেন সাথে, এসেই সেটাকে লুকিয়ে ফেলেছিলেন। ভাবতে চেষ্টা করলেন শম্ভু। কি সেটা? এর আগেও কয়েকবার ভাবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন না কোন ভাবে অন্য দিকে মন চলে গেছে। আজ ঠিক করলেন মনে করতেই হবে। অনেক দিন আগের কথা, কিন্তু খুব চেষ্টা করলে কি আর মনে পড়বে না? কে যেন মাথার মধ্যে হেঁকে বলল – খুব মনে পড়বে, এইত সময় এসেছে! শম্ভুনাথ উমা কে হাঁক দিয়ে বললেন, আমি একটু ঘুরে আসছি, তুমি খেয়ে নিও।
বাড়ীর থেকে একটু দূরে পুকুর। পুকুরের পাড়ে একটা বিশাল বেল গাছ, তার পাশে আরেকটা অশ্বথ গাছ। বেশ ছায়া ছায়া জায়গাটা। একটা কোন দেখে বসলেন। হটাৎ চোখের সামনে একটা নীল আলোর ঝলকানি খেলে গেল। শম্ভুনাথ ভয় পেলেন। কি সব হচ্ছে আজকে! কেমন একটা ঝিমুনি আসছে। গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে ধীরে ধীরে শম্ভুনাথ গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেলেন।
চারিদিকে আগুন। কিছু বাড়ী পুড়ছে। কাঠ আর বাঁশ ফাটার ফট ফট আওয়াজ। গ্রামের লোকজন পালাচ্ছে। কিছু লোক পিছু নিয়েছে ওদের। বাচ্চারা কাঁদছে। সরস্বতী মায়ের বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে আছে। ওইটুকু মেয়ের বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে যেতে হয়। একটু আওয়াজ বেরোলেই ধরা পড়ে যাবেন পরিবার শুদ্ধ। গ্রামটা অচেনা, একটি ঘন ঝোপের জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন। হটাৎ পায়ে কি একটা ঠেকল, একটা টাটকা মৃতদেহ। গলার এদিক থেকে ওদিক ফালা করা। বিশেষ বিচলিত হলেন না শভুনাথ। ইশারায় উমা কে বললেন বাচ্চাদের আড়াল করতে। লাশ যেন চোখে যেন না পড়ে। সারা রাস্তায় এরকম অগুন্তি লাশ পড়ে আছে, কত আড়াল করবেন? সন্ধ্যা হয়ে আসছে, একটা আশ্রয় প্রয়োজন।
ডানদিকে আবছা একটা কি দেখা যাচ্ছে যেন। একটা ছোট নালা। পেরোলেন সেটা। উমার মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই, না ভয়ের না, না অন্য কিছুর। বৌটা পাগল টাগল হয়ে গেলনা তো? এদিকে মেঘ করে আসছে, গায়ে দুটো মোটা মোটা বৃষ্টির ফোঁটা পড়ল। আলো ক্রমশ কমে আসছে।
নালা পেরিয়ে একটু এগোনোর পরে অবয়বটা স্পষ্ট হল। একটা শিবমন্দির। পা চালিয়ে চললেন। বাইরে হওয়া জোরদার হচ্ছে, ঝড় উঠবে মনে হচ্ছে। মন্দির দেখে মনে একটু ভরসা এলো, যদি আর কোন লোকজন আশ্রয় নিয়ে থাকে, সঙ্গ পাবেন। গোটা পরিবার খুব সাবধানে মন্দিরে ঢুকলেন। মাঝারি মাপের মন্দির, বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বামদিকে একটি ছোট নাটমন্দির আর তার পাশেই আসল মন্দির। বেশ মজবুত মোটা কাঠের দরজা মন্দিরের। কিন্তু ভেতর থেকে কিছু দিয়ে দরজা আটকানোর ব্যবস্থা নেই। কালো পাথরের শিবলিঙ্গ, মাথার ওপর বেলপাতা ও কিছু তাজা ফুল। তার মানে আজকে বিকেলেও পুজো হয়েছে। একটা রেড়ির তেলের প্রদীপ একপাশে জ্বলছে। ওঁরা ভেতরে ঢুকে বসে দরজা ভেজিয়ে দিলেন। বাচ্চাগুলোর সারাদিন পেটে কিছু পড়েনি, মুখ শুকিয়ে আছে সবার। সাথে একটু খই আর গুড় ছাড়া কিছুই নেই। একটা কোনা দেখে হাতের জিনিসপত্র রাখলেন। মন্দির পেয়ে উমা একটু নিশ্চিন্ত। বাচ্চাদের সবাইকে একটু করে গুড় ভাগ করে দিলেন। এমন সময় পায়ের আওয়াজ, আর একটু পরেই মন্দিরের দরজা আস্তে করে খুলে গেল। মন্দিরে ঢুকলেন একজন ভৈরব। মাঝবয়েসি, দীর্ঘ পেটানো চেহারা। পরনে রক্তাম্বর, কাঁধে ঝোলা, হাতে একটি অদ্ভুত দর্শন ত্রিশূল। ত্রিশূলটা প্রায় ভৈরবের সমান লম্বা, কিন্তু মাঝের শুলটা থেকে একটা নীলাভ দ্যুতি বেরোচ্ছে। ভৈরবের চোখটি শান্ত, একটা মৃদু হাসির রেখা আছে। ভৈরবে মন্দিরে ঢোকার সাথে সাথে পরিবেশটা পাল্টে গেল। কেউ ভয় পেলেন না, বরং অনেকটাই আশ্বস্ত বোধ করলেন।

ভৈরব কাঁধের ঝোলাটা নামিয়ে রাখলেন এক পাশে। তারপর ঝোলা থেকে বার করলেন শাল পাতায় মোড়া ঘৃতসিক্ত পুরী, ভারী অড়হড় ডাল আর লাড্ডু। বললেন – দুটো খেয়ে নিন সকলে, সকাল থেকে তো খাবার জোটেনি। ঝোলা থেকে একটা পিতলের ছোট ঘড়া বার করে উমার হাতে দিয়ে বললেন – মা বাচ্চাদের দিন, গরুর দুধ আছে, জ্বাল দেওয়া।
শম্ভুনাথের চোখে জল এলো। বাচ্চাদের দুধ, নিজেদের খাবার জুটবে এই অবস্থায়, তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। এদিকে শাঁ শাঁ শব্দে হাওয়া দিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ভৈরব কম কথার মানুষ, খাবার শেষ হবার পরে নিজের ঝোলা থেকে একটা শিকড় বার করে উমার হাতে দিয়ে বললেন – মা, ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে কেটে গেছে, এটা চিবিয়ে দু ঢোক জল দিয়ে খেয়ে ফেলুন। উমা বুঝলেন ভৈরব বিশেষ কোন দৈব ক্ষমতার অধিকারী, বোধহয় ওদের আসার খবর আগেই জানতেন। পায়ের আঙুলে যে ক্ষত হয়েছে, তার কথা উমা এখনো কাউকে বলেননি। উনি দেখছি সেটার ব্যাপারেও অবগত।

হটাৎ বাইরে একটা হট্টগোল শোনা গেল। অনেক লোকের গলার আওয়াজ। ভৈরব দরজা অল্প ফাঁক করে দেখলেন মন্দির থেকে প্রায় একশ হাত দূরে একটা চালার নিচে প্রায় জনা দশেক লোক জড় হয়েছে। নেকড়ের পাল। এক হাতে মশাল, অন্য হাতে ধারালো অস্ত্র। অনুসরণ করছিল বোধ করি, গন্ধে গন্ধে ঠিক হাজির হয়েছে। ওরা আটকে আছে মুষলধারে বৃষ্টির জন্য, বৃষ্টিতে বেরোলে মশাল নিভে যাবে। বৃষ্টি কমলেই মন্দিরে হানা দেবে, আর তারপর ছেলেদের লাশ পড়ে থাকবে আর মেয়েরা লুটের দ্রব্য হয়ে যাবে। উমা ঠিক করলেন ওদের হাতে ধরা পড়ার আগে ছেলেমেয়েদের নিজে হাতে গলা টিপে মেরে, নিজের গলায় ছুরি দেবেন। সাথে করে নিয়ে এসেছেন এক ধারালো শলাকা, গয়নার পুঁটলিতে রাখা আছে।
ভৈরব নিঃশঙ্কচিত্ত, চোখ অর্ধ নিমীলিত, পদ্মাসনে বসে আছেন। মন্দিরের মাঝে শুধু বৃষ্টির শব্দ। কেউ কোন কথা বলছেনা, বলার মতন কিছু নেই ও। কাছেই খুব শব্দ করে একটা বাজ পড়ল। ছোট্ট কার্তিক মুখ দিয়ে একটা ভয়ের আওয়াজ করে, মার কোলে মুখ লুকালো। বাজ পড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি কমতে শুরু করল। উমা গয়নার পুঁটলির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে শলাকা মুঠি করে চেপে ধরলেন। আর কিছু সময়, তার পরেই সব শেষ হয়ে যাবে। বৃষ্টি আরও ধরে এলো। মশালগুলো এবার সোজা করে বাগিয়ে, শ্বাপদের দল চালা থেকে বেরোবে বেরোবে করছে, এমন সময় একটা দমকা হওয়ায় মন্দিরের ভারী কাঠের দরজা একটু ফাঁক হয়ে গেল। আর ভৈরব দেয়ালের গায়ে হেলান দেওয়া ত্রিশূল নিজের হাতে নিয়ে একটি মন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে, মন্দিরের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন।
আঁধারের মধ্যে শম্ভুনাথ দেখলেন ত্রিশূলটির মাঝের শূলের নীলাভ দ্যুতি অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আর ঠিক সেই সময় ঘটনাটা ঘটল। কান ফাটানো শব্দ করে আর নীল আলোয় চারিদিক ভাসিয়ে চালার ওপরে একটা বাজ পড়ল। বাজ পড়ার সাথে সাথে চালাতে আগুন ধরে গেল। উমা আর বাচ্চারা আওয়াজের তীব্রতায় জ্ঞান হারালেন। আরেকবার বিদ্যুৎ চমকালো। সেই আলোতে শম্ভুনাথ দেখলেন চালার এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে আধপোড়া ধোঁয়া ওঠা কিছু মৃতদেহ।

এবার ভৈরব ঘুরলেন শম্ভুনাথের দিকে। বললেন কাল সকালেই মন্দিরের পশ্চিম কোণের রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ চললেই একটা বড় দলের সাথে দেখা হয়ে যাবে। তারপর আর কোন বিপদ নেই। আজ যা ঘটল তা তোমাদের আর কারোরই মনে থাকবে না। দীর্ঘকাল পরে একদিন তোমার স্মৃতির পুনর্জাগরণ ঘটবে। সেদিন তোমার সব ঘটনার কথা মনে পড়বে। কিন্তু সে সময় বড় ভালো সময় নয়। ঈশান কোণে কালবৈশাখী ঘনাচ্ছে এরকম কালে। সতর্ক থেকো।
শম্ভুনাথ কৃতাঞ্জলিপুটে বললেন – আপনার পরিচয় কি পেতে পারি মহাত্মা? ভৈরব একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন – আমিই তুমি। যেদিন সময় আসবে সেদিন স্বদর্শন হবে, আত্মপরিচয় পাবে। এই ত্রিশূলও তোমার। তোমার গৃহের পূর্ব কোণে একটি বেলগাছের পাশের মাটিতে এঁকে খনন করলেই পাবে। তবে যেদিন আত্মোপলব্ধি হবে সেদিন সব আড়াল বিলুপ্ত হবে। এখন নিদ্রা যাও, আর বিপদ নেই। সকালে যেরকম ভাবে বলেছি, সেভাবে যাত্রা কোরো। আজকের রাতের সব স্মৃতি তোমরা সকলে বিস্মৃত হবে। শম্ভুনাথ ভৈরব কে প্রণাম করলেন। ভৈরব মৃদু হাসলেন। তারপর জোরে শ্বাস টেনে, ডান হাতের তর্জনী শম্ভুনাথের দুই ভুরুর মাঝে স্থাপন করলেন।
শম্ভুনাথের সুষুপ্তাবস্থা যখন কাটলো তখন দুপুর পেরিয়ে গেছে। একটুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পরে, বাড়ী ফিরে এলেন। উমা খাবার সাজিয়ে অনেকক্ষন অপেক্ষার পরে ক্লান্ত হয়ে মাদুরের ওপর শুয়ে পড়েছিলেন। শম্ভুনাথকে দেখে উমা মৃদুস্বরে বললেন – খেয়ে নাও।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.